কসোভো : আন্দোলন সংগ্রামে ইউরোপের বাংলাদেশ
সোলায়মান সোহেল : বাংলাদেশের মত উপনিবেশিক শোষণ, তারপর পাকিস্তানের মত সার্বিয়ার বঞ্চনার খড়গ, ৫২’র মত ভাষা ও শিক্ষা আন্দোলন অতঃপর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা । এ যেন ইউরোপের ভিতর একখন্ড বাংলাদেশ। তারপরও মুসলিম প্রধান স্বাধীন কসোভোকে স্বীকৃতি দিতে কেন কোন ইশারায় এত দেরী।
প্রাচীন যুগ : ব্রোঞ্জ ও লৌহযুগেও আজকের কসোভোতে মানব বসতি ছিল। তখন এটি থ্রাসিয়ান জাতিগোষ্টি দ্বারা অধ্যুষিত ছিল। এরপর দারদানিরা এ অঞ্চলে আবাস গড়ে তোলে। যদিও দারদানি (Dardani) দের জাতিগত ও ভাষাগত অন্তর্ভূক্তি নির্ধারণ করা কঠিন। সাবেক হেলেনীয় ও রোমান যুগের প্রারম্বে এখানে একটি শক্তিশালী গ্রুপ ছিল। প্রাচীন কাল হতেই এই এলাকায় মূলত থ্রেসিয়ান ও ইলিরিয়ান জাতিগোষ্ঠির শাসন ছিল।
রোমানদের হাতে ইলিরিয়ানদের পরাজয়ের পর এই অঞ্চল (আজকের কসোভো) রোমানদের একটি উপনিবেশে পরিণত হয়। রোমানরা কসোভোতে আলপিয়ান, থেরান্ডা ও ভিসিয়ানামসহ বেশ কয়েকটি শহর গড়ে তোলে, পরে রোমান সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশে হিসাবে অর্ন্তভূক্ত হয়। সে সময় কসোভোর নাম ছিল ইলিরিকাম। পরবর্তীকালে ৮৭ খ্রিষ্টাব্দে কসোভো মোয়েসিয়া সুপেরিয়র এর অংশ হয়। কসোভোতে ৪র্থ, ৬ষ্ট ও ৭ম শতাব্দীতে স্লাভিওরা বেশ কয়েকটি বর্বর অভিযান পরিচালনা করে। যার ফলশ্রুতিতে কসোভোতে স্লাভিওদের সংখ্যা বাড়তে থাকে। আস্তে আস্তে নেটিভরা সংখ্যালগু হয়ে যায়।
কসোভোর প্রারম্ভিক যুগ : ৫২০ খ্রিষ্টাব্দে স্লাভ উপজাতিরা ইলিরিকামে (আজকের কসোভো) সার্ভ পৌরণিক শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। সম্রাট হেরাক্লিয়াসের শাসনামলে সার্ভরা বলকান অঞ্চলে ব্যাপক হারে বসতি স্থাপন করে এবং স্থানীয়দের সাথে মিশে যায়। ৮৫০ খ্রিষ্টাব্দে এটি বুলগেরিয় সাম্রাজ্যের অধিভূক্ত হয়। ১০১৮ খ্রিষ্টাব্দে বাইজেনটাইনরা এ অঞ্চল অধিকার করে। ১০৫৪ সালে ধর্মীয় ভিত্তিতে এ অঞ্চল দু’ভাগে পশ্চিম ও পূর্ব নামে বিভক্ত হয়ে যায়। পূর্ব অংশ (আজকের কসোভো) রোমান সাম্রাজ্যের মধ্যে পড়ে আর পশ্চিম অংশ কনস্টান্টিনোপলের অংশ হয়। ১২০০ খ্রিষ্টাব্দ পযন্ত এই বিভক্তি বিদ্যমান ছিল।
কসোভোতে ইসলামী শাসন : ১৩ শতকের পর কসোভো তরস্কের সুলতানদের অধিনস্থ হয়। ১৬ শতাব্দীতে রোমানদের হাত থেকে কসোভো ইসলামি খেলাফত উসমানীয়া সুলতানরা অধিকার করেন। মূলত তখন থেকেই এ অঞ্চলে ইসলামের আর্বিভাব ও প্রসার ঘটে। ১৬৮৩ থেকে ১৬৯৯ সাল পর্যন্ত উসমানীয়া সুলতান (অটোমান) ও হাব্সবার্গদের মধ্যে গ্রেট তুর্কি যুদ্ধ নামে অনেক গুলো যুদ্ধ সংঘঠিত হয়। সে যুদ্ধে সার্ব ও আলবেনীয়রা গুরুত্বপূর্ণ অংশিদার ছিলো। শেষ যুদ্ধে অস্ট্রিয়রা হাব্সবার্গদের পক্ষাবলম্বন করলে কসোভোতে ইসলামী শাসনের যবনিপাত ঘটে। ১৩৪৭ সালে সার্বিয়ার রাজা স্তেফান আলবেনীয়া দখল করলে আলবেনীয়রা গ্রীসে পালিয়ে যায় গণহারে। ১৩৮৮ সালে উসমানিয়া খেলাফতের সুলতান মুরাদ কসোভো আক্রমন করেন। কিন্তু এ যুদ্ধে সুলতানগণ ব্যর্থ হন। তবে ১৪৩০ সালে সার্বিয়ার রাজাকে পরাজিত করে কসোভোকে উসমানিয়া সাম্রাজ্যের অংশ করেন। প্রায় ৪০০ বছর শাসন করেন। ১৬ শতকে উসমানিয়া সুলতানগণ আলবেনীয়ান কসোভোতে ইসলাম প্রসারের নীতি গ্রহন করেন। তাতে ১৭ শতকের মাঝামাঝিতে আলবেনীয় ও কসোভোর তিনের দুইভাগ ইসলামের দাওয়াত গ্রহন করেন।১৯ শতকে কসোভো : কসোভোর জনসংখ্যায় ১৯ শতকেও মুসলিম আলবেনীয়দের সংখ্যাসূচক শ্রেষ্ঠত্ব ছিল। তার পরেই ছিল সার্বরা। ১৮৩৮ সালে অস্ট্রীয় গবেষণায় কসোভোতে জনসংখ্যায় আধিক্য ছিল স্লাভদের তবে প্রীজরেন, পেক এবং ডাকোভিকা ইত্যাদি অংশ মুসলিম আলবেনীয় অধ্যুসিত। ২য় সংখ্যায় ছিল মুসলিম আলবেনীয়রা।
জার্মান ইতিহাসবিদ কিয়েপার্ট এবং অস্ট্রীয় কনসাল কে সাক্সের ১৮৭৬ সালে করা এক যৌথ জরিপে দেখা যায় যে মুসলিম আলবেনীয়রা কসোভোর অধিকাংশ ভূখন্ডে বসবাস ছিল। তাদের জরিপে আরোও প্রকাশ প্রায় কসোভোর পশ্চিম ও পূর্ব দু’ই অংশের অধিকাংশ ভূখন্ডে মুসলিম আলবেনীয়রা বসতি স্থাপন করেছিল। ১৮৯৯ সালে প্রকাশিত এক অস্ট্রীয় জরিপে দেখা যায় কসোভোতে ৪৭.৮৮% মুসলিম আলবেনীয় এবং ৪৩.৭০% সার্ব (স্লাভীয়)। ১৯ শতকের শেষ দিকে করা এক জরিপে ৬০০০ হাজার নাগরিকের মধ্যে ৪৯০০০ হাজার নাগরিক ছিল মুসলিম। ২০ শতকেও মুসলিম আলবেনীয়দের প্রাধান্য ছিল।
কসোভোর স্বাধীনতা আন্দোলন: কসোভো স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশের মত এক রক্তক্ষয়ী দীর্ঘ সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্যদিয়ে। বলকান অঞ্চলে মার্শাল টীটো যুগোস্লাভিয়া নামে একটি রাষ্ট্র গঠন করে। পশ্চিমা ষড়যন্ত্রে টিটোর সেই যুগোস্লাভিয়া টুকরো টুকরো হয়ে যায়। কসোভো এবং সার্বিয়া অঞ্চল নিয়ে সার্বিয়া প্রজাতন্ত্র গঠিত হয়। কসোভো বাসীর ভাগ্যের বদল হয় না, পকারান্তে তাদের উপর নেমে আসে বঞ্চনার নগ্ন অভিশাপ। সার্বরা শোষন করতে থাকে কসোভোর অধিবাসীদের। তাই কসোভোবাসী নিজেদের বিশ্ব দরবারে মর্যাদা প্রতিষ্ঠা ও শোষণ-বঞ্চনার হাত থেকে বাঁচতে ১৯৯১ সালে কসোভো লিবারেশন আর্মি (ক খ অ) প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৯৫ সালে কেএলএ প্রথম হামলা করে। ১৯৯৭ সালে কসোভো লিবারেশন আর্মির অস্ত্র মজুদ বাড়ে। ১৯৯৮ সালের দিকে কেএলএ তে আধা সামরিক ও নিয়মিত বাহিনীর সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং সেই সাথে তাদের শক্তি ও সমর্থন দু’ই বৃদ্ধি পায়। ফলে শঙ্কিত হয়ে সার্ব কর্তৃপক্ষ কসোভোতে সামরিক অপারেশন চালায় তাতে প্রায় ২০০০ হাজার বেসামরিক নাগরিক ও কসোভো লিবারেশন আর্মির যোদ্ধা (কেএলএ) নিহত হয়। যার ফলে জনগন তাদের উপর সহানুভূতিশীল হয়ে পড়ে। যুগোস্লাভিয়া এবং সার্বিয়া বাহিনী ব্যাপক ধ্বংস যজ্ঞ চালায়। নির্বিচারে হত্যা করে কসোভোর সংখ্যাগুরু আলবেনীয় মুসলিম নাগরিকদের। সার্বিয় বাহিনী সেখানে সন্ত্রাস, খুন, ধর্ষণ জ্বালাও পোড়াও ও মারাত্মক মেলট্রিটমেন্ট করে আলবেনীয় মুসলিমদের নির্মূল করার চেষ্টা করে। মুক্তির এ লড়াইয়ে কসোভো বাসীর নেতৃত্বদেন ইব্রাহিম রগুভা। মানবিক যুদ্ধ নাম দিয়ে পরে ন্যাটো এ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে।
২০ শতাব্দী জুড়ে কসোভোর মূল অধিবাসী ও সার্বিয় শাসক গোষ্ঠির মধ্যে সংঘাত ও সহিংসতা বিদ্যমান ছিল, বিশেষ করে বলকান যুদ্ধের সময়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে যোসেফ ব্রোজ টিটো (মার্শাল টিটো)’র যুগোস্লাভিয়ার সমাজতান্ত্রিক সরকার দেশের সর্বত্র বিশেষ করে কসোভোতে জাতীয়তাবাদ উত্থানকে বল প্রয়োগ করে অবদমিত করে রাখে। ১৯৫৬ সালে কসোভোতে ইউনিয়ন নিশানা গ্রুপ নামে কসোভো বাসী স্বাধীনতার জন্য একটি বিপ্লবী ইউনিট তৈরী করে আন্দোলন পরিচালনা করে। ১৯৬৪ সালে এ ইউনিটের নেতা অনেক সহযোগীসহ কারাবরণ করেন।
কসোভোর স্বাধীনতায় ছাত্র আন্দোলন: ১৯৬৮ যুগোস্লাভ নিরাপত্তা বাহিনীর দমন-পীড়ন বন্ধে ও কসোভো প্রাদেশিক রাজধানী প্রিস্টিনাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, আলবেনীয় ভাষাকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সস্বাধীনতার অংশ হিসেবে স্থানীয় প্রতিনিধি ক্ষমতার স্বীকৃতির দাবিতে আলবেনীয় ছাত্ররা ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলে। ছাত্রদের এই আন্দোলনের ফলে টিটো ১৯৭০ সালে কসোভো বাসীর জন্য প্রিস্টিনাতে একটি বিশ্ববিদ্যালয়, ভাষার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও আলবেনীয় ভাষায় পাঠ্য পুস্তক ও শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করতে বাধ্য হন।
১৯৬৯ সালে সার্বিয়দের স্বার্থ সুরক্ষিত করতে বেলগ্রেড সরকার ও খ্রীস্টান পাদ্রীরা মিলে কসোভোবাসীর উপর এক নির্মমতার ইতিহাস রচনা করে। কসোভোর মুসলিমদের দাবিয়ে রাখতে সব রকম চেষ্টা করে।
১৯৭৪ সালে কসোভো বাসীর নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মুখে যুগোস্লাভিয় বেলগ্রেড সরকার তাদের সংবিধানে কসোভোর রাজনৈতিক অধিকারের ধারা সমন্বিত করেন। পুলিশ বাহিনী ও ন্যাশনাল ব্যাংকে কসোভোর নাগরিকদের চাকরির সুযোগ দেয়। এবং কসোভোকে একটি প্রদেশর মর্যাদা দেয়। এর আগে কসোভো বাসীর সরাসরি কোন রাজনীতির অধিকার ছিল না।
মার্শাল টিটোর পরবর্তী কসোভো: সাবেক যগোস্লাভিয়া ও সার্বিয়া যুগে কসোভো বলকান অঞ্চলে সবচেয়ে দরিদ্র প্রদেশ ছিল। সেখানে কমিউনিস্টরা ক্ষমতায় থাকলেও তাদের নীতিকথা সাম্যবাদ হতে কসোভোকে দূরে রাখা হয়েছিল। ১৯৮০ সালে টিটোর মৃত্যুর পর যুগোস্লাভিয়ায় অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় কসোভোতে অর্থনৈতিক সংকট রাজনৈতিক অস্থিরতা, সার্বিয়া কর্তৃক কসোভোতে নিগ্রহের মাত্রা চরম আকার ধারন করে। কসোভোর আলবেনীয় মুসলিমরা যাতে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা না পায়, যাতে তারা শিক্ষার আলো থেকো বঞ্চিত হয় তার সবরকম চেষ্টা বেলগ্রেড সরকারকে দিয়ে সার্বরা করে যেতে থাকে। তার একটি উদাহারন হল যুগোস্লাভিয়া ও সার্বিয়াতে যখন মাথাপিছু গড় আয় যখন ২৬৩৫ মার্কিন ডলার তখন কসোভোতে মাত্র ৭৯৫ ডলার। এ এক জাতিভেদ, দমন-পীড়ন, শোষন-বঞ্চনার নগ্ন বাস্তবতা।
অর্থনৈতিক এ নিদারুন বঞ্চনা ও সার্বিয়ার দমন-পীড়নের বিরোদ্ধে ১৯৮১ সালে প্রিস্টিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে ছাত্রদের এক প্রতিবাদ সমাবেশ হয়। ছাত্ররা লাগাতার বিক্ষোভ পালন করে। সেই প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ প্রিস্টিনাসহ সারা কসোভোতে ছড়িয়ে পড়ে। দাঙ্গা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর হাতে অসংখ্য কসোভোবাসী নিগৃহীত ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। যুগোস্লাভিয়ার সরকার জরুরি অবস্থা জারি করেন। কসোভোর অর্থনৈতিক মুক্তির এ আন্দোলনকে সার্বিয়রা চাপা দিতে কসোভো জুড়ে ব্যাপক গ্রেপ্তার শুরু করে। অসংখ্য কসোভো নাগরিককে চাকরি থেকে ছাঁটাই করে। প্রতিবাদি ছাত্রদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে বহিষ্কার করে। এ সময় কসোভো ও সার্বিয়ার মধ্যে জাতিগত উত্তেজনা বাড়তে থাকে।
১৯৮২ সালে সার্বিয়ার খ্রীস্টান যাজক ও বিশপরা মিলে কসোভোর মুসলিমদের দাবিয়ে রাখার জন্য একটি উগ্র সংগঠন তৈরী করে। যারা কসোভোর মসজিদ ও অন্যান্য ধর্মীয় স্থাপনা ধ্বংস, লুট ও অগ্নিসংযোগ করে। তারা কসোভোতে সব পবিত্র স্থান ধ্বংস করতে সার্বিয়া ও বেলগ্রেডে প্রচারনা চালায়। এবং মিডিয়াতে এই অপপ্রচার চালায় যে, কসোভোতে সার্ব ও মন্টিনিগ্রোরা অত্যচারিত। ১৯৮১ সালে এক রিপোর্টে প্রকাশ পায় যে সার্বিয়া থেকে ৪০০০ হাজার সার্ব কসোভোতে গিয়ে এক ভয়াবহ দাঙ্গা (রায়ট) করে। অনেক আলবেনীয় মুসলিমকে হত্যা করে কবরস্থান গুলোকে অপবিত্র করে।
১৯৮৬ সালে ষোল সদস্য বিশিষ্ট শানু (এস.এ.এন. ইউ) সার্বিয় কমিটি বেলগ্রেড সরকারকে একটি স্মারকলিপি দেয়। যাতে কসোভোর আলবেনীয় মুসলিমদের দাবিয়ে রাখতে নানা কু-পরিকল্পনার ছক আকা ছিল। তা জনগনের নিকট প্রকাশ হয়ে পড়ে। সেখানে আরোও বলা হয় যে, ১৩ শতকে অটোমেন সুলতান কর্তৃক পরাজয়ের পর কসোভোর স-স্বাধীনতা আরেকটি বড় পরাজয় হবে।
১৯৮৭ ডেভিড বিন্ডার নিউ ইয়র্ক টাইমসে লিখেছে যে কসোভোতে সার্বিয়া গণহত্যা চালায়। এসময় কসোভোর গণহত্যার প্রতিবাদে আলবেনীয় এক সৈনিক চার সহকর্মী সৈন্যদের হত্যা করে। এ সময় কসোভোর স্বাধীনতায় বিশ্বাসি সৈনিক জওয়ানরা অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে সসস্ত্র সংগ্রামের অভিপ্রায়ে সার্বিয়া ব্যারাক ত্যাগ করে।
১৯৮৮ সালে সার্ব প্রভাবিত যুগোস্লাভিয়ার মিলোসেভিচ সরকার কসোভোর স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা ও কসোভো প্রাদেশিক এসেম্বিলির নেতাকে গ্রেফতার করে।
১৯৮৯ সালে যুগোস্লাভিয়ার কমিউনিষ্ট সরকারের প্রধান মিলোসেভিচ সার্বদের স্বার্থে “বিরোধী আমলাতান্ত্রিক বিপ্লব” কসোভো এবং ভোজভোডিয়ানা’ ঘোষণার মাধ্যমে মার্শাল টিটো কর্তৃক প্রদত্ত কসোভোর স্বায়ত্তশাসন তুলে নেওয়ার আদেশ জারি করলে কসোভোর সর্বত্র বিক্ষোভ পালন করে প্রতিবাদি জনতা। সেই বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে ২২ জন বিক্ষোব্ধ জনতা মৃত্যু হয়। কসোভো বাসির উপর চাপিয়ে দেয়া হয় লাগাতার কারফিউ ও জরুরী অবস্থা।
১৯৯০ জুনের শেষ সপ্তাহে সার্বীয় কর্তৃপক্ষ কসোভোর প্রাদেশিক পরিষদ বন্ধ করে দেয়। এই দিকে ২ জুলাই ১৯৯০ সালে কসোভো পরিষদের ১১৪ সদস্য কসোভোর জনগনের দাবি মেনে নিয়ে কসোভোকে একটি স্বাধীন প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করে। ৪ সেপ্টেম্বর কসোভোতে ২৪ ঘন্টা হরতাল পালিত হয়। কার্যত এই দিনে সার্বীয়া হতে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে যায়। ৭ সেপ্টেম্বরে কসোভো প্রজাতন্ত্রের নিজস্ব সংবিধান জারি করে।
১৯৯১ সালে ফেডারেল যুগোস্লাভিয়া ভেঙ্গে যাওয়া শুরু। কসোভোর স্বাধীনতা
প্রশ্নে গণভোটে নাগরিকগণ সার্বিয়া হতে কসোভোর স্বাধীনতার পক্ষে শতকরা ৯০ ভাগ ভোট পড়লেও সার্বিয়া কসোভোর স্বাধীনতা অস্বীকার করে। কসোভোর গণমাধ্যম বন্ধ করে দেয়। সার্বিয়ার ব্যাপক দরপাকর এবং দমন-পীড়ন মুখে কসোভোর স্বাধীনতা আন্দোলন থমকে যায়।
১৯৯২ সালে আংশিকভাবে স্বীকৃত কসোভো প্রজাতন্ত্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন কসোভো স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা বলকান গান্ধি ইব্রাহিম রগুভা।
১৯৯৩ সালে জাতিসংঘ বিশেষ দূত এক রিপোর্ট পেশ করেন যে ১৯৯০ সালের পর থেকে সার্বিয়ান শাসনগোষ্টি ও পুলিশ কসোভোর জনগণের মৌলিক অধিকার কেড়ে নেয় ও শিক্ষা ব্যাবস্থাকে ধ্বংস করে।
১৯৯৬ সার্বিয়ার অব্যাহত নিপীড়ন আলবেনীয় মুসলিমদের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়। কসোভো লিবারেশন আর্মি এ বছর সার্বিয় বাহিনীদের বিরুদ্ধে ৪ টি বড় আক্রমন পরিচালনা করে।
১৯৯৭ সালে আলবেনীয় রাষ্ট্রপতি সালি বেরিশার পতনের পর কসোভোর মুক্তিযোদ্ধাদের সামরিক সহায়তা কমে যায়।
১৯৯৮ সালে আমেরিকা স্টেট ডিপার্টমেন্ট কসোভোর মুক্তিযোদ্ধা পরিচালনাকারী সংগঠন “কে এল এ” কে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করে।
যুুগোস্লাভিয়া ভেঙ্গে যাওয়া শুরু হয় ১৯৯০ সালে সার্বিয়ার জন্ম হলে তখন থেকেই টিটো যুগের স্বায়ত্ব স্বাসিত অঞ্চল কসোভো আলাদা রাষ্ট্র গঠনের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করলে সার্বিয়া আন্দোলকারীদের উপর নির্মম অভিযান চালায়। ফলে কসোভোর স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা বলকান গান্ধি ইব্রাহিম রগুভা কসোভো বাসীদের উপর এ জঘন্য অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচতে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা কামনা করেন। যার ফলে ১৯৯৯ সালে উত্তর আটলান্টিক ট্রিটি সংস্থা (ন্যাটো) সার্বিয়ার অপততপরতা বন্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। ৯ জুন ১৯৯৮ সালে বিল ক্লিনটন কসোভো যুদ্ধের উপর যুগোস্লাভিয়া ও সার্বিয়ার হুমকি জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষনা করে। জাতিসংঘের মহাসচিব নিরাপত্তা পরিষদে এক রেজোলেশনে জানান যে কসোভোতে সার্বিয় অভিযানে প্রায় ২৫০০০০ মানুষশীতকালে গরম পোশাক ছাড়াই তাদের ঘর বাড়ী হতে বিতাড়িত হয়েছে। এই দিকে ইব্রাহিম রগুভা ন্যাটো হামলার সুনির্দিষ্ট ব্যপ্তি ও সার্বিয়া প্রভাবিত মিলোসেভিচকে যুদ্ধ বন্ধের জন্য আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়কে চাপ প্রয়োগের আহ্বান জানিয়ে দুই সপ্তাহব্যপি শান্তি আলোচনা শুরু করেন। ১৯৯৮ সালের ৩০ অক্টোবর ন্যাটো “অপারেশন ঈগল আই” নামে এক সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখে।
১৯৯৯ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত কসোভোর শহরাঞ্চলে ফেজ বোমার ব্যাবহার শুরু করে ন্যাটো। এই দিনে সার্বিয়া বাহিনী রেকাক নামে এক গণহত্যা সংঘঠিত করে যেখানে ৪৫ জন নিরীহ কৃষককে হত্যা করে।
৩০ জানুয়ারি ১৯৯৯ সালে এই সময় সার্বিয়ার হুমকি আরো তীব্র হলে ন্যাটো সার্বিয়া বাহিনীর বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু করেন। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্যারিসে কসোভোর পুনঃস্বাধীনতা ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একটি শান্তি সম্মেলন করেন। পরে সম্মেলন ব্যর্থ হয়। ১২ জুন ন্যাটোর শান্তিরক্ষী বাহিনী কসোভোর রাজধানী প্রিস্টিনাতে প্রবেশ করে।
১৯৯৯ সালে জাতিসংঘ সার্বিয়ার কাছ থেকে কসোভোর শাসনভার গ্রহণ করে।
২০০০ সালে সার্বিয়া এবং রাশিয়ার সাথে এক অস্ত্র চুক্তি হয়। যা কসোভোর স্বাধীনতার জন্য হুমকি স্বরুপ।
২০০৬ সালে কসোভোর স্বাধীনতার এক মডেল জাতিসংঘের মহাসচিব তোলে ধরেন।
দীর্ঘ এক সংগ্রামের পর অবশেষে কসোভোবাসীর স্বপ্ন পূরণ হয় ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী হাসিম তাচি কসোভোর স্বাধীনতা ঘোষনা করেন। এ দিনে কসোভোকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আমেরিকা সহ আন্তর্জাতিক সম্প্র্রাদয় স্বীকৃতি প্রদান করেন।
কসোভোর জাতির জনক ও স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রধান নেতা হলেন ইব্রাহিম রগুভা। তিনি কসোভোর প্রথম রাষ্ট্রপতি।
১৯৯৫ সালের গণহত্যা
যুগোশ্লাভিয়া ভেঙে যাওয়ার পর সার্বরা ১৯৯৫ সালের জুন মাসে সেব্রেনিচা শহরটি দখল করে নেয়। জাতিসংঘের ৮১৯ নম্বর প্রস্তাবে অনুযায়ী সেব্রেনিচা শহরটি নিরাপদ অঞ্চল বলে ঘোষণা করা হয়েছিল।
কিন্তু সার্বরা জাতিসংঘের ডাচ শান্তিরক্ষীদের কোনো বাধা ছাড়াই শহরটি দখল করে সেখানে আশ্রয় নেয়া হাজার হাজার বেসামরিক মুসলমানকে হত্যা করে এবং হাজার হাজার নারীকে ধর্ষণ করে। রাতকো মিলাদিচের নেতৃত্বাধীন বর্বর সার্ব বাহিনী এই গণহত্যা চালায়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটাই ইউরোপে সংঘটিত সবচেয়ে বড় গণহত্যা ও জাতিগত শুদ্ধি অভিযান। ডাচ শান্তিরক্ষীদের নিস্ক্রিয়তার মুখে ও গ্রিক সেচ্ছাসেবী বাহিনীর সহায়তায় সার্বরা এই গণহত্যা চালায়। ১৯৯৫ সালে বসনিয়ান সার্ব বাহিনীর খ্রিস্ট্রান জঙ্গিদের হাতে এই হত্যাযজ্ঞের শিকার হন ৮,৩৭২ জন মুসলিম পুরুষ এবং বালক।
রাজনীতি
বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার রাজনীতি একটি সংসদীয় প্রতিনিধিত্বমূলক বহুদলীয় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কাঠামোয় সংঘটিত হয়। সরকারপ্রধান হলেন বসনিয়া ও হার্জেগোভিনার মন্ত্রীপরিষদ। রাষ্ট্রের নির্বাহী ক্ষমতা সরকারের উপর ন্যস্ত। আইন প্রণয়নের ক্ষমতা সরকার এবং আইনসভা উভয়ের উপর ন্যস্ত। বিচার বিভাগ নির্বাহী বিভাগ ও আইনসভা হতে স্বাধীন।
রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্যেই মাথা তোলে কসোভো
সার্বদের নির্যাতন থেকে বাঁচতে কসোভোর আলবেনীয়রা আশ্রয়ের খোঁজে ছোটে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে।
দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপের দেশ কসোভো ২০০৮ সালে সার্বিয়ার কাছ থেকে একতরফাভাবে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়। স্বাধীনতা ঘোষণার পর পরই তাদের স্বীকৃতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের বহু দেশ। তবে রাশিয়ার দৃঢ় সমর্থনের কারণে সার্বিয়া আজও দেশটিকে স্বীকৃতি দেয়নি। বাংলাদেশ গতকাল দেশটিকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
১৯৯০ সালে যুগোস্লাভিয়া ভেঙে সার্বিয়ার জন্ম হয়। শুরু থেকেই কসোভো আলাদা হয়ে যাওয়ার আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলন থামাতে ওই অঞ্চলের আলবেনীয়দের ওপর নির্মম অভিযান চালায় সার্বিয়া। ১৯৯৯ সালে ন্যাটো সামরিক অভিযান শুরু করার পর সার্বিয়া তাদের তত্পরতা বন্ধে বাধ্য হয়।
২০০৮ সাল পর্যন্ত অঞ্চলটি জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। পুরো সময়টি জাতিসংঘ কসোভোতে বসবাসকারী আলবেনীয় ও সার্বদের মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালায়। তবে তাতে খুব একটা কাজ হয়নি। কসোভোর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরা হলো—
প্রথম শতাব্দী (খিস্টাব্দ) : রোমানরা দখলে নেয় অঞ্চলটি। ওই সময় এ এলাকায় বসবাসকারী জাতিগোষ্ঠীকে বলা হতো দারদানি। এরা ইলিরিয়ান বা ট্রেসিয়ান বংশোদ্ভূত হতে পারে বলে মনে করা হয়।
ষষ্ঠ শতাব্দী : স্লাভরা ওই অঞ্চলে বসতি স্থাপন শুরু করে। রোমানদের নিয়ন্ত্রণ থেকে এরা বের হয়ে আসায় সেখানে সীমান্ত সংঘাত শুরু হয়।
দ্বাদশ শতাব্দী : কসোভো সার্বিয়ার নিয়ন্ত্রণে আসে। এ সময় কসোভো অঞ্চলে বহু গির্জা নির্মিত হয়।
১৩৮৯ : বিখ্যাত কসোভো যুদ্ধের মাধ্যমে এখানে ওসমানিয়া শাসনের গোড়াপত্তন হয়, যা ৫০০ বছর ধরে চলে। এই দীর্ঘ সময়ে কসোভোতে মূলত মুসলিম ও আলবেনীয়দের সংখ্যাধিক্য দেখা যায়।
১৯১২ : বলকান যুদ্ধ। সার্বিয়া তুরস্কের কাছ থেকে কসোভোর নিয়ন্ত্রণ দখল করে।
১৯৪৬ : যুগোস্লাভ ফেডারেশনে কসোভোর অন্তর্ভুক্তি।
১৯৭৪ : কসোভোকে স্বায়ত্তশাসিত এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি দেয় যুগোস্লাভিয়ার সংবিধান।
১৯৯০ : যুগোস্লাভিয়ার প্রেসিডেন্ট স্লোবোদান মিলোসেভিচ কসোভোর স্বায়ত্তশাসন কেড়ে নিয়ে প্রদেশটিকে সার্বিয়ার প্রশাসনের অন্তর্ভুক্ত করেন। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে আলবেনীয়রা তীব্র বিক্ষোভ শুরু করে।
১৯৯১ : যুগোস্লাভিয়া ভেঙে যাওয়া শুরু। কসোভো স্বাধীনতার আন্দোলন শুরু করলেও ব্যর্থ হয়। দমন অভিযান শুরু করে সার্বিয়া।
১৯৯৬ : বিদ্রোহী কসোভো লিবারেশন আর্মির (কেএনএ) জোরদার সশস্ত্র তত্পরতা শুরু। একই সঙ্গে সার্বিয়ার দমন অভিযানও অব্যাহত।
১৯৯৯ : কসোভোর সহিংসতা বন্ধে আন্তজার্তিক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার পর ন্যাটো সার্ব লক্ষ্যবস্তুতে বোমা হামলা শুরু করে। জবাবে কসোভোর আলবেনীয়দের জাতিগতভাবে নির্মূল শুরু করে সার্বিয়া ও যুগোস্লাভ। এরপর এক শান্তিচুক্তির মাধ্যমে সার্বিয়া ও যুগোস্লাভ কসোভো থেকে সেনা প্রত্যাহর এবং জাতিসংঘের প্রশাসন কসোভোর দায়িত্ব নেয়।
২০০৮ : কসোভোর স্বাধীনতা ঘোষণা।
২০১৩ : সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে কসোভো ও সার্বিয়ার মধ্যে চুক্তি সই। এই চুক্ততে কসোভোতে বসবাসকারী সার্ব সংখ্যাগুরু এলাকাগুলোকে বৃহত্তর স্বায়ত্তশাসন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
কসোভোর রাজধানীর নাম প্রিস্টিনা। জনসংখ্যা ২০ লাখের বেশি। আয়তন ১০ হাজার ৮৮৭ বর্গকিলোমিটার। প্রধান ভাষা আলবেনীয় ও সার্বীয়; প্রধান ধর্ম ইসলাম ও খ্রিস্টান। বর্তমান প্রেসিডেন্টের নাম হাশিম থাসি।
শীর্ষ কসোভো সার্ব নেতা ইভানোভিচ খুন
কসোভোর বিশিষ্ট সার্ব নেতা অলিভার ইভানোভিচকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
তার আইনজীবী নেবজৎসা ব্লাজিকের বরাত দিয়ে বিবিসি জানায়, মিত্রোভিকার উত্তরে সার্ব নিয়ন্ত্রিত এলাকায় মঙ্গলবার ইভানোভিচের উপর এ হামলা হয়।
“চারটি গুলি ইভানোভিচের বুকে লাগে, হাসপাতালে নেওয়ার পর তিনি মারা যান।”
৬৪ বছরের এই রাজনীতিবিদকে হত্যার খবর পেয়ে কসোভো আলবেনীয়দের সঙ্গে ব্রাসেলসে ইইউ’র মধ্যস্থতায় চলমান শান্তি আলোচনা থেকে সার্বিয়া সরকারের আলোচকরা ওয়াকআউট করেছে।
সার্বিয়ার প্রতিনিধি মার্কো জুরিক বলেন, “এটি একটি অপরাধ এবং অবশ্যই এই সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিচার ও শাস্তি হতে হবে।”
সার্বিয়া থেকে বিচ্ছিন্নতার পর থেকে কসোভোতে এখনও জাতিগত বিভেদ বিদ্যমান।
কসোভো সার্ব রাজনীতিবিদদের মধ্যে মধ্যপন্থি হিসাবে পরিচিত ছিলেন ইভানোভিচ। নেটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে নানা আলোচনায় তিনি নেতৃস্থানীয় ভূমিকায় ছিলেন।
যদিও ১৯৯৯ সালে আদিবাসী আলবানিয়দের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে যুদ্ধাপরাধের একটি মামলার পুনর্বিচারের মুখে পড়েছিলেন ইভানোভিচ।
২০১৬ সালে কসোভোয় ইইউ’র বিচারকরা তাকে নয় বছরের কারাদণ্ড দেন। কিন্তু এক বছর পর একটি আপিল আদালতে ওই শাস্তি বাতিল হয়ে যায়।
ইভানোভিচ বরাবরই নিজেকে নির্দোষ দাবি করেছেন।
২০০৮ সালে সার্বিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে কসোভো স্বাধীনতা ঘোষণা করে। বিশ্বের ১১৫টি দেশ তাদের স্বীকৃতি দিলেও সার্বিয়া ও তাদের মিত্র রাশিয়া স্বীকৃতি দেয়নি।
বলকান অঞ্চলের মুসলিম দেশ কসোভোয় সামরিক অভিযান চালানোর হুমকি দিয়েছে সার্বিয়া। সেনাবাহিনী গঠনের জন্য একটি আইন পাস করেছে কসোভো আর এতেই প্তি হয়েছে সার্বিয়া। গত শুক্রবার কসভোর পার্লামেন্টে পাঁচ হাজার সদস্যের একটি সেনাবাহিনী গঠনের আইন পাসের পে ভোট দেন এমপিরা। আইনে বলা হয়েছে, পাঁচ হাজার নিয়মিত সৈন্যের সাথে থাকবে আরো তিন হাজার রিজার্ভ সেনা।
এক সময় সার্বিয়ার অংশ ছিল মুসলিম অধ্যুষিত কসোভো, দীর্ঘ লড়াই আর গণহত্যার শিকার দেশটি যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতায় অবশেষে স্বাধীন হয়েছে ২০০৮ সালে। কসোভোর নাগরিকদের বেশির ভাগই জাতিগত আলবেনীয়। সার্বিয়া এখনো দেশটির স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়নি। কসভোর নিজস্ব সেনাবাহিনী গঠনের পদপেকে সার্বিয়া বলছে ‘বলকান অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতার’ ওপর সরাসরি হুমকি। সার্বিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনা ব্রানাবিক বলেছেন, এর ফলে তাদের হাতে এখন একটি মাত্র উপায়ই আছে (সেনা অভিযান)। কসোভোর পার্লামেন্টের বর্তমান ১০৭ জন এমপির সবাই বিলটির পে ভোট দিয়েছেন। নিরাপত্তা বাহিনী সম্প্রসারণ সংক্রান্ত তিনটি খসড়া বিল পাস হয়েছে এ ভোটের মাধ্যমে। স্বাধীন কসোভোর সংবিধান প্রণয়নের সময়ই সেনাবাহিনী গঠনের বিধান রাখা হয়েছিল, যদিও গত বছরে দেশটি সেনাবাহিনী গঠনের পদপে নেয়নি।
কসোভোর এই পদেেপ সমর্থন জানিয়ে বিলটিকে ঐতিহাসিক হিসেবে আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা কসভোর সার্বভৌমত্ব রার অধিকারের পে আছে বলেও জানিয়েছে। কসোভোর প্রধানমন্ত্রী রামুশ হারাদিনাজ বলেছেন, নতুন সেনাবাহিনী সার্বিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহারের উদ্দেশ্য গঠন করা হচ্ছে না। বরং শান্তি প্রতিষ্ঠায় এখন থেকে সার্বিয়ার সেনাবাহিনী সঙ্গী হিসেবে পাবে কসোভোর সেনাবাহিনীকে।
সার্বিয়া আশঙ্কা করছে, যেসব জাতিগত সার্ব কসোভোয় রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনী গঠন করা হচ্ছে, যদিও তেমন আশঙ্কার কথা নাকচ করে দিয়েছে কসোভো। পার্লামেন্টে বিল পাসের পরদিন সার্বিয়ার প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা নিকোলা সিলাকভিচ বলেছেন, এর প্রতিক্রিয়া তার দেশ কসোভোয় সেনা পাঠাতে পারে কিংবা দেশটিকে একটি অধিকৃত অঞ্চল হিসেবে ঘোষণা করতে পারে। সার্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তারা এ বিষয়ে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদের সিদ্ধান্ত চান।
কসোভোর স্বাধীনতা ঘোষণা বৈধ আন্তর্জাতিক আদালতের রায়
আন্তর্জাতিক আদালত (আইসিজে) কসোভোর স্বাধীনতা ঘোষণাকে বৈধ হিসাবে ঘোষণা করেছে। নেদারল্যান্ডের হেগে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি হাসাশি ওয়াদা গত বৃহস্পতিবার রায় পাঠ করে বলেছেন, কসোভোর স্বাধীনতা ঘোষণায় আন্তর্জাতিক আইন লংঘিত হয়নি। স্বাধীনতা ঘোষণা আন্তর্জাতিক আইনে নিষিদ্ধ নয়।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ সার্বিয়ার অনুরোধে ২০০৮ সালের ৭ অক্টোবর কসোভোর স্বাধীনতা ঘোষণা আইনসঙ্গত হয়েছে কিনা সে ব্যাপারে মতামত প্রদানে আন্তর্জাতিক আদালতের দ্বারস্থ হয়। আদালতের কাছে বিষয়টি হস্তান্তর করার দু’বছর পর আদালত এ রায় দেয়। আন্তর্জাতিক আদালতের রায় মেনে নেয়া কোনো দেশের জন্য বাধত্যামূলক নয়। কসোভোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিকান্দার হায়সানি বলেছেন, তিনি আশা করছেন সার্বিয়া তার সাবেক প্রদেশ কসোভোকে স্বাধীন দেশ হিসাবে স্বীকৃতি দেবে। তিনি বলেন, আমি আশা করি সার্বিয়া আমাদের প্রতি হাত বাড়িয়ে দেবে এবং আমাদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করবে। তবে স্বাধীন দেশ হিসাবেই একমাত্র আলোচনা হতে পারে।
সার্বিয়ার প্রেসিডেন্ট বরিস তাদিস আন্তর্জাতিক আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেছেন, আদালতের রায় কসোভো প্রশ্নে সার্বিয়ার অবস্থানের কোনো হেরফের হবে না। সার্বিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভাক জেরেমিস বলেছেন, সার্বিয়া কোনো অবস্থায় কখনো কসোভোর একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণাকে স্বীকৃতি দেবে না। জেরেমিস কসোভোর উত্তরাঞ্চলে বসবাসকারী সংখ্যালঘু সার্বদের ধৈর্য্য ধারণের আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রায় ৭০টি দেশ স্বাধীন দেশ হিসাবে কসোভোকে স্বীকৃতি দিয়েছে। তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশের মধ্যে ২২টি দেশ রয়েছে। সার্বিয়া কসোভোকে তাদের একটি প্রদেশ এবং সার্ব জাতির সূতিকাগার হিসাবে বিবেচনা করে। তবে বাস্তবে কসোভো হলো একটি মুসলিম প্রধান ভূখণ্ড। ন্যাটোর ৭৮ দিনব্যাপী বোমাবর্ষণের মধ্য দিয়ে ১৯৯৮-৯৯ সালে সার্বিয়া ও কসোভোর মধ্যাকার দু’বছরের লড়াই শেষ হয়। যুদ্ধের পর জাতিসংঘ কসোভোর প্রশাসনিক দায়িত্ব গ্রহণ করে। ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি কসোভোর পার্লামেন্ট স্বাধীনতা ঘোষণা করে। কসোভোতে ২০ লাখ আলবেনীয় বংশোদ্ভূত মুসলমান ও ১ লাখ ২০ হাজার সার্ব পৃথকভাবে বসবাস করছে। তাদের মধ্যে পারস্পরিক সন্দেহ বিদ্যমান এবং তারা একে অন্যের প্রতি বৈরী।